পুলিশবন্ধু, অনুসন্ধান ও কেস স্ট্যাডি ডেক্স:
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় মিছিল থেকে কক্সবাজারে আওয়ামী লীগ, জাসদ, জাতীয় পার্টির জেলা কার্যালয়সহ একটি মসজিদ, কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং গাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। এছাড়া কক্সবাজার সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়কসহ ছাত্রলীগের চার নেতাকে কুপিয়ে-মারধর করে আহত করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দিনভর থেমে থেমে কক্সবাজার শহরের প্রবেশমুখ লিংক রোড, কক্সবাজার সরকারি কলেজ, শহরের লালদিঘীর পাড়া, ঝাউতলা এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে মিছিল নিয়ে ঘুরে বেড়ানো কয়েকশ শিক্ষার্থী এসব ঘটনা ঘটিয়েছে। আহত কক্সবাজার সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রাজিবুল ইসলাম মোস্তাক, জেলা ছাত্রলীগ নেতা মঈন উদ্দিন, সাঈদ হোছেইন কাদেরী, ইউনুস উদ্দিন আকাশকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশ, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ নেতা ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বেলা ১১টায় কক্সবাজার পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী কোটা সংস্কারের দাবিতে মিছিল সহকারে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের লিংকরোডে অবস্থান নেয়। এ সময় কোটাবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে সড়কে চলাচলকারী কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে তারা। পুলিশ তাদেরকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলেও আন্দোলনকারীরা সরেনি। পরে কোটা আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে লিংক রোড থেকে কক্সবাজার সরকারি কলেজের দিকে যায়। তখন কলেজ গেইটে অবস্থান নেওয়া ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।
এ সময় পুলিশের হস্তক্ষেপে ছাত্রলীগ পিছু হটলেও আন্দোলনকারীরা কলেজের গেইটে কয়েকটি মোটর সাইকেলে ও গেটের স্থাপনা ভাঙচুর করে। পরে পুলিশের আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ।এর ঘটনার পর কিছুক্ষণ আন্দোলন বন্ধ থাকলেও দুপুর আড়াইটার পরে মিছিল সহকারে আন্দোলনকারীরা আবারও লিংক রোড এলাকায় কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। পরে পুলিশ আবার আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেন।
এর ঘণ্টাদুয়েক পর বিকাল ৪টার দিকে শহরের ঝাউতলা এলাকায় আন্দোলনকারীরা মিছিল শুরু করে। হাতে লাঠি, ইটপাটকেল নিয়ে মিছিলটি প্রধান সড়কে কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর চালিয়ে কক্সবাজার শহরের লালদিঘীর পাড়া এলাকায় যান। সেখানে আওয়ামী লীগ, জাসদ ও জাতীয় পার্টির জেলা কার্যালয় এবং আশে-পাশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর চালানো হয়। ভাঙচুর করা হয় পাশে অবস্থিত মসজিদের জানালা, অজুখানা। মারধর করা হয় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের নেতাদেরও। ওখান থেকে আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে যায় কক্সবাজার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। পরে বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়।
কোটা আন্দোলনকারীদের মিছিল নিয়ে শহরজুড়ে নাশকতা চালানো হয়েছে অভিযোগ করে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, মিছিলে অংশ নেয়ারা শিক্ষার্থী না। তারা সকলেই পরিকল্পিত হামলাকারী। এদের হাতে লাঠি, লোহার রড, ইটপাটকেল ও ধারালো অস্ত্র ছিল। এরা শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ঘুরে মিছিল সহকারে ভাঙচুর চালিয়ে দলীয় কার্যালয়ে আসে। আন্দোলনকারীদের পক্ষে মিছিল করা লোকজন চিহ্নিত শিবির ও ছাত্রদলের ক্যাডার। এরা কখনও খালেদা জিয়া, কখনও নিজামীর নামে উল্লেখ করে রাজাকার দাবি করে স্লোগান দিয়েছে।
শিবির ও ছাত্রদল এই তাণ্ডব চালিয়েছে দাবি করে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ কার্যালয়, জাসদ কার্যালয়, জাতীয় পার্টির কার্যালয় ছাড়াও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর চালায় তারা। তাদের হামলা থেকে রক্ষা পায়নি মসজিদও। এক পর্যায়ে দলীয় কার্যালয়ে থাকা কক্সবাজার সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রাজীবুল ইসলাম মোস্তাককে কুপিয়ে আহত করা হয়। একই সময় মারধর করা হয়েছে জেলা ছাত্রলীগ নেতা মঈন উদ্দিন, সাঈদ হোছেইন কাদেরীসহ কয়েকজনকে। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
যদিও আন্দোলনকারীদের পক্ষে এ ব্যাপারে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে মিছিলটি কক্সবাজার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পৌঁছালে একযোগে কয়েকজনকে উচ্চস্বরে বক্তব্য দিতে দেখা গেছে। কিন্তু পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার আগেই ‘রাজাকার-রাজাকার’ স্লোগান শুনে পুলিশ তাদের শহীদ মিনার থেকে সরিয়ে দেন।
এ ব্যপারে কক্সবাজার সদর মডেল থানার পরিদর্শক মো. রকিবুজ্জামান বলেন, আন্দোলনকারীরা মিছিল সহকারে কয়েকটি স্থানে ভাঙচুর ও কয়েকজনকে মারধর করেছে। পরে তাদের সরিয়ে দেয়া হয়েছে। কারা ভাঙচুর ও মারধর করেছে তাদের ভিডিও, ছবি পাওয়া গেছে। তাদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে। এখন পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলেও জানান তিনি।