পুলিশবন্ধু, অর্থ-বাণিজ্য ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ডেক্স:
চলতি বছরের শেষ ছয় মাসে (জুলাই থেকে ডিসেম্বর) বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান থেকে জি-টু-জি ভিত্তিতে ১৬ হাজার ৪৮৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকার পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সেইসঙ্গে ভারতের নুমালীগড় রিফাইনারী লিমিটেড থেকে ২৭৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকা দিয়ে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এই জ্বালানি তেল আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার সচিব মো. মাহমুদুল হোসাইন খান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, ২০২৪ সালের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ওমান, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, আরব আমিরাত, চীন ও ইন্দোনেশিয়া থেকে সম্ভাব্য কী পরিমাণ জ্বালানি তেল আমদানি করা হবে, তার প্রিমিয়াম এবং প্রাইসসহ একটা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
সচিব জানান, চলতি বছরের ২৮ জুনে বিভিন্ন তেলের যে দাম ছিল সেটাকে রেফারেন্স প্রাইস হিসেবে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। প্রিমিয়াম বিভিন্ন জ্বালানির ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম। যেমন প্রতি ব্যারেল ডিজেলের প্রিমিয়াম ৮.৮০ মার্কিন ডলার, জেট ফুয়েল ১০.৮৮ ডলার, ফার্নেস অয়েল ৪৬.৭২ ডলার, অকটেন ৯.৮৮ ডলার এবং মেরিন ফুয়েল ৭৬.৮৮ ডলার। এটা টেন্ডারে পাওয়া প্রিমিয়াম।
তবে জি-টু-জি ভিত্তিতে কিছুটা কমে পাওয়া গেছে বলে জানান সচিব মাহমুদুল হোসাইন খান। তিনি বলেন, জি-টু-জি ভিত্তিতে প্রতি ব্যারেল ডিজেলের প্রিমিয়াম ৮.৭৫ মার্কিন ডলার, জেট ফুয়েল ১০.৮৮ ডলার, ফার্নেস অয়েল ৪৬.৭০ ডলার।
তিনি বলেন, সাতটি দেশ থেকে বিভিন্ন জ্বলানি পণ্য আমদানির জন্য রেফারেন্স প্রাইস এবং প্রিমিয়ামসহ আনুমানিক মূল্য বাংলাদেশি টাকায় ১৬ হাজার ৪৮৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। ১৮ লাখ মেট্রিক টন পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির জন্য এই ব্যয়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এটা আনুমানিক মূল্য। প্রকৃত দাম নির্ধারিত হবে যেদিন কেনা হবে ওই দিন এবং তার আগের দুই দিন ও পরের দুইদিনসহ মোট পাঁচ দিনের দামের গড় করে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)’র ২০২৪ সালের পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির প্রস্তাব ২০২৩ সালের ১৫ নভেম্বর তারিখের সিসিইএ’র সভায় নীতিগতভাবে অনুমোদিত হয়। দেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে চুক্তির আওতায় জি-টু-জি ভিত্তিতে নেগোসিয়েশন করা বিভিন্ন দেশের ৮টি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব প্রতিষ্ঠান (বিএসপি ইন্দোনেশিয়া, ইএনওসি আরব আমিরাত, আইওসিএল মালয়েশিয়া, পেট্রোচায়না চীন, পিটিএলসিএল মালয়েশিয়া, পিটিটিটি থাইল্যান্ড, ওকিউটি ওমান ও ইউএনআইপিইসি চীন) থেকে ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর সময়ের জন্য ১৮ লাখ মেট্রিক টন পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
এর মধ্যে গ্যাস অয়েল ১১ লাখ মেট্রিক টন, জেট ফুয়েল ২০ হাজার মেট্রিক টন, ফার্নেস অয়েল ২ লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন, মোগ্যাস ১ লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন এবং মেরিন ফুয়েল ৩০ হাজার মেট্রিক টন আমদানি করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
এদিকে, ভারতের নুমালীগড় রিফাইনারী লিমিটেড থেকে জুলাই থেকে ডিসেম্বর ২০২৪ সময়ের জন্য ৩০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
এ বিষয়ে সচিব মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, সরকার মোট যে জ্বালানি তেল আমদানি করে তার ৫০ শতাংশ করে জি-টু-জি ভিত্তিতে। বাকি ৫০ শতাংশ স্পর্ট মার্কেট থেকে কেনা হয়। নুমালীগড় রিফাইনারী থেকে যে ডিজেল কেনা হবে তা জি-টু-জি প্রক্রিয়ায়।
তিনি বলেন, ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপ লাইনের মাধ্যমে এই ডিজেল শিলিগুড়ি মার্কেটিং টার্মিন্যাল থেকে বাংলাদেশের পর্বতীপুর ডিপোতে সরাসরি আমদানি হবে। প্রিমিয়ামসহ ৩০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল দাম হবে ২৭৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। প্রতি ব্যারেলে প্রিমিয়াম হলো ৫.৫০ মার্কিন ডলার। আর রেফারেন্স প্রাইস ধরা হয়েছে চলতি বছরের ২৮ জুনের।