1. policebondhu@gmail.com : Jasemuddin Ruman : Jasemuddin Ruman
  2. jasemruman@gmail.com : policebondhu :
  3. propertypokkho@gmail.com : Jasem Ruman : Jasem Ruman
সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি :
'পুলিশবন্ধু ডট কম' সংশ্লিষ্ট সকলের সতর্কতার জন্য জানানো যাচ্ছে যে, 'পুলিশবন্ধু ডট কম' এর 'সম্পাদক, প্রকাশক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা' জনাব মোঃ জসীমউদদীন (রুমান) এর ব্যক্তিগত ব্যাংক একাউন্ট এবং বিকাশ/নগদ/রকেট/উপায় এর '০১৭১২ ৩৯২৫৭০(পার্সোনাল)' একাউন্ট ছাড়া অন্য কোন মাধ্যমে 'পুলিশবন্ধু ডট কম' এর পক্ষে কোন ধরণের আর্থিক লেনদেন পরিচালিত হয়না। অতএব, অন্যকোন মাধ্যমে 'পুলিশবন্ধু ডট কম' বিষয়ক আর্থিক লেনদেন না করার জন্য সবাইকে সম্পূর্ণভাবে নিষেধ করা হচ্ছে। সতর্কতায়:- 'পুলিশবন্ধু ডট কম' কর্তৃপক্ষ।

অধিকাংশ বই-ই ‘বই’ হয় না: মুহম্মদ নূরুল হুদা

  • প্রকাশকাল : মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

পুলিশবন্ধু, সাক্ষাৎকার ও বিশেষ আয়োজন ডেক্স:
মুহম্মদ নূরুল হুদা বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি খ্যাতিমান গবেষক, ঔপন্যাসিক ও সাহিত্য-সমালোচক। ১৯৮৮ সালে বাংলা কবিতায় উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদকসহ অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন। অমর একুশে বইমেলা সামনে রেখে পুলিশবন্ধু’কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে মেলার প্রস্তুতি, বাংলা সাহিত্যের বর্তমান অবস্থান, প্রকাশনা শিল্প, পাঠকের চিন্তাধারাসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন তিনি। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন পুলিশবন্ধু শীদ্ধার্থ শীল

পুলিশবন্ধু: বছর ঘুরে আবার শুরু হচ্ছে বাঙালির প্রাণের অমর একুশে বইমেলা। এবারের মেলার সার্বিক প্রেক্ষাপট নিয়ে যদি কিছু বলেন?

মুহম্মদ নূরুল হুদা: অমর একুশে বইমেলার প্রস্তুতি শুরু করেছি অক্টোবর-নভেম্বর থেকে। যেহেতু জানুয়ারি মাসে আমাদের জাতীয় নির্বাচন ছিল। সেজন্য নির্বাচন সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত আমরা কাজে হাত দিতে পারিনি। দাপ্তরিক কাজগুলো সেরে ফেলেছিলাম। দ্রুততম সময়ে নীতিমালা সংশোধনী করেছি। নতুন নীতিমালা তৈরি হয়েছে। বইমেলার জন্য মাঠ পেতেও দেরি হয়েছে। অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল মাঠ পাব কি না? তবে এরই মধ্যে মেলার অবকাঠামোগত প্রস্তুতির শেষপর্যায়ে এসে গেছি। এবারের বইমেলা নানা সীমাবদ্ধতা থাকলেও পূর্ণাঙ্গভাবে প্রস্তুত হয়ে উঠেছে। যথারীতি ১ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধন করবেন। আশা করা যায়, এবারের বইমেলা নতুন মাত্রা পাবে।

পুলিশবন্ধু: মেলা ঘিরে সার্বিক প্রস্তুতি কেমন হলো?

মুহম্মদ নূরুল হুদা: অমর একুশে বইমেলা আগে যা ছিল তাই, গতবারের কাঠামোটাই মোটামুটি রেখেছি। এর সঙ্গে আরও নতুন বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। লেখক মঞ্চ আমরা অন্যত্র আরও সুবিধাজনক জায়গা দিয়েছি। যাতে লেখক মঞ্চের পাশাপাশি অন্য কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী শব্দদূষণ না থাকে। বিন্যাসের ক্ষেত্রে লিটল ম্যাগাজিন চত্বরকেও অন্য জায়গায় স্থানান্তর করা হয়েছে। শিশু স্টল বিন্যাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাংলা একাডেমির ভেতরে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি-ছাত্র প্রতিষ্ঠানের স্টলগুলো যথারীতি রয়েছে।

এবারের বইমেলায় আশা করছি, আইনশৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষ আমাদের যেভাবে সহযোগিতা করছে তাতে আমরা নিশ্চিন্তে মেলাটা করতে পারব। বইমেলার একটা বড় ঝামেলা হচ্ছে, খাবারের স্টল। গতবার খাবারের স্টল নিয়ে যথেষ্ট ঝামেলা হয়েছিল। এবার খাবারের স্টল না দিয়ে বইমেলা করার জন্য পূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের অনুরোধ করা হয়েছিল, বলব এটা তাদের ইচ্ছে ছিল। তাদের সঙ্গে বারবার মিটিং করার পর খাবার স্টল দেওয়ার পক্ষে তারা মত দিতে সম্মত হয়েছেন। তবে এবার খাবার স্টলের ভেতরে রান্না হবে না। তৈরি করা খাবার বাইরে থেকে নিয়ে আসা হবে। এই ঝঞ্ঝাট থেকে এবার আমরা মুক্তি পাব। এ স্টলগুলো সীমানা প্রাচীর ঘেঁষে যেভাবে থাকে সেভাবেই থাকবে। এর পাশাপাশি একটি বহির্গমনও থাকবে।

প্রকাশকরা এবারের বইমেলায় বইয়ের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। কাগজের দাম বেড়ে যাওয়ায় বইয়ের খরচের দাম বেড়ে যাওয়ার কথা বলছেন। এজন্য বইয়ের দামের ২৫ শতাংশ কমিশন প্রত্যাহার করার দাবি উঠেছিল। কিন্তু কমিশন প্রত্যাহার করা হবে না।

পুলিশবন্ধু: বইমেলা কি গতানুগতিকতার মধ্যে বন্দি হয়ে আছে? যদি না থাকে তাহলে নতুনত্ব কী রয়েছে?

মুহম্মদ নূরুল হুদা: বাংলা একাডেমি বইমেলার শুরু থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত নিজেই মেলা পরিচালনা করে আসছিল। কয়েক বছর ধরে বাংলা একাডেমি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে এ মেলাটি পরিচালনা করে আসছিল। এর কারণ হচ্ছে, গতবার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট বাংলা একাডেমির যা যা কাজ করা দরকার, প্রণোদনা দিয়েছিলাম। সে অনুযায়ী তারা কাজ করেনি। এর ফলে আমাদের নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। তার চেয়েও বড় কথা মেলায় যারা এসেছিলেন তাদের অনেক কষ্ট হয়েছে। একটি উদাহরণ, যেখানে মোড়ক ‍উন্মোচন আমরা করি, সেখানে সবসময় একটা জটলা লেগেই থাকে। সেখানে বাথরুম যুক্ত করার কথা ভেবেছিলাম। গতবারের ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট শেষদিকে অর্থাৎ সপ্তাহখানেক পর অবহেলাবশত দুটো বাথরুম করে দিয়েছিল। এসব বিষয় বিবেচনা করে এবার বাংলা একাডেমি নিজেই বইমেলা পরিচালনা করার জন্য তৈরি হয়েছে। বইমেলার গেট সজ্জা থেকে শুরু করে স্টেজসজ্জায় আমরা নতুন করে পরিকল্পনা নিচ্ছি। এতে বইমেলার রূপ বাড়বে। এবারের বইমেলায় প্রচুর জনসমাগম হবে বলে আশা করছি। এর আরেকটা কারণ মেট্রোরেল চালু হয়েছে। রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে। এরপরও চলবে কি না জানি না। মেট্রোরেলের উৎস থেকে মতিঝিল, উত্তরা, মিরপুর থেকেও পাঠক, দর্শকরা মেলায় আসতে পারবেন, দ্রুত বেরিয়ে যেতেও পারবেন। মেলায় আগমন-নির্গমনের পথগুলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে সুশৃঙ্খলভাবে করার চেষ্টা করছি। আগামী বছর এ স্থানে মেলা করতে পারব কি না এ নিয়ে এখনো নিশ্চয়তা নেই? এটা পরের বিবেচ্য। গত বছরের থেকে স্থান কমিয়ে নিয়ে এসেছি। গতবার প্রচুর জায়গা খোলা ছিল। যেখানে স্টল করা যায়নি। সেখানে জটলা হয়েছিল। এবারের মেলাটি আগের চেয়ে বড় না হওয়া সত্ত্বেও সুশৃঙ্খল হবে।

তথ্য সরবরাহের ব্যবস্থা রয়েছে। তথ্য সরবরাহের জন্য এটুআই নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। প্রতিদিন নতুন বই কী আসছে যেটা ঘোষণা দেওয়া হতো, এই প্রতিষ্ঠান প্রস্তাব দিয়েছে, সেটা স্ক্রিনে দেখানো হবে। মেলায় কত লোক প্রবেশ করলেন, কত লোক বের হলেন তা গণনা করার পদ্ধতি গ্রহণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

পুলিশবন্ধু: এ বছর কী ধরনের বই আসতে পারে?

মুহম্মদ নূরুল হুদা: বাংলা একাডেমি থেকে নিয়মিত বইয়ের তালিকায় ফোকলোর বিভাগ থেকে ফোকলোর বিষয়ক, গবেষণা সংকলন, সংকলন থেকে বই বের হচ্ছে। বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমির বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। রাষ্ট্রকে চিহ্নিত করার জন্য ভূমিকা চিহ্নিত করার সঙ্গে সঙ্গে ভাষাকে চিহ্নিত করা। বাংলা একাডেমি আগাগোড়াই ভাষাভিত্তিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সেগুলো নিয়ে বই বের করেছে। বাংলা একাডেমি কিছু কাজ হাতে নিয়েছে। যেসব মানুষ বাংলা ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত, স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত, একটা মনীষী জাদুঘর আমাদের বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউজের দোতলা-তিনতলা জুড়ে রয়েছে। অনেক বই বের হচ্ছে। তার মধ্যে ‘সংস্কৃতি ও সদাচার’। সংস্কৃতি ও সদাচার মানে বাংলাদেশ জাতি রাষ্ট্র, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, সাংবিধানিকভাবে এটি সব মানুষের নান্দনিক রাষ্ট্র। নান্দনিক রাষ্ট্রের পক্ষে মানুষের মনের ভেতর যে সদাচারের কথা সভ্যতা হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ—তার সভ্যতার সংকট প্রবন্ধে। তিনি বলেছিলেন, মনু কথিত সদাচার। সেই সদাচার জিনিসটা কী, আমাদের দেশে কীভাবে এটা বিশেষায়িত হলো। সে বিষয়ে বিভিন্ন লেখকের, একালের যারা তাত্ত্বিক, লেখক, চিন্তক তাদের রচনা নিয়ে আমরা ‘সংস্কৃতি সদাচার’ নামে একটি বই বের করেছি। যেটা আমার মনে হয়, ভবিষ্যতের যে বাংলাদেশ, নৈয়ায়িক, মানবিক, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠনের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। বিশিষ্ট লেখকদের রচনা ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

পুলিশবন্ধু: ডিজিটাল যুগে মুদ্রিত গ্রন্থ বইমেলার প্রাসঙ্গিকতা কতটা?

মুহম্মদ নূরুল হুদা: ডিজিটাল মেলার পাশাপাশি শারীরিক মেলা। বই একটি শারীরের বিষয়, বস্তু। মানুষ যতদিন উঠে যাবে না, বইও ততদিন উঠে যাবে না। কারণ মানুষের মধ্যে যে চিন্তা আছে, সেই চিন্তা থাকতে হলে মানুষকে দরকার। তেমনিভাবে তার চিন্তাকে মূর্তভাবে ধারণ করতে হলে একটি বই দরকার। বই ধরা যায়, এটাকে নেড়েচেড়ে দেখা যায়। এটাকে আদর করা যায়। ভালোবাসার উৎস। শুধু ইন্টার জীবন নয়, ভালোবাসার অর্থ হচ্ছে টেনজিবল। তাকে আদর করে বুকে ধরে, চোখের পাশে ধরে, বারবার কাছে নেওয়া। অর্থাৎ আমাদের ধারণা মুদ্রিত গ্রন্থের বিবর্তন হতে পারে, আমরা অনেক ভালো কাগজের দিকে এসে গেছি। ট্রান্সফার কাগজের দিকে আমরা আসতে পারি। অন্য সময় অন্য কোনো পদ্ধতিও আসতে পারে। কিন্তু বই বর্তমানে যে পদ্ধতিতেই আসবে, গত দু-তিন হাজার বছর আগে যেভাবে আছে সেভাবে থাকবেই এটা আমার বিশ্বাস। তবে বইমেলার পাশাপাশি অনলাইনে বইগুলো দেখাচ্ছি। ঠিক তেমনিভাবে বইমেলার পাশাপাশি অনলাইন মেলাও শুরু হতে পারে। কিন্তু সেটা পৃথিবীর কোথাও দেখা যাচ্ছে না। যদি কখনো দেখা যায়, তখন আমরা তাই করব। ঘরকে যেমন আমরা ধারণ করে রাখে, আমাদের শরীরকে আমরা যেমন ধারণ করে রাখি ঠিক তেমনভাবে বইমেলা জ্ঞান, বিজ্ঞান সংস্কৃতির একটি অভিব্যক্তি। যাকে আমি ধরতে পারি, ছুঁতে পারি। সেটা বন্ধ হওয়ার কোনো আশঙ্কা আমি দেখি না, সংকট আমি দেখি না।

পুলিশবন্ধু: বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের পাশাপাশি আপনি একজন কবিও। মানুষের বই পড়ার অভ্যাসে পরিবর্তন এসেছে বলে আপনি মনে করেন কি না? এখন কী ধরনের বইয়ের প্রতি পাঠকের আগ্রহ বেশি?

মুহম্মদ নূরুল হুদা: আমার যতটুকু মনে হয়, এখন পাঠক মানে ফেসবুকের পাঠক। মানে টুকরো টুকরো কথার পাঠক। টুকরো টুকরো কথাগুলো মানে, যে কথাগুলো মানুষকে হাসায়, ব্যঙ্গ করে। এমন সব জিনিস দেওয়া হয়, যা সত্য থেকে দূরে সরে গেছে, কিন্তু মানুষকে আকর্ষণ করছে। এই প্রবণতার ফলে মানুষের পড়ার অভ্যাসটাই নষ্ট হয়ে গেছে। এখান থেকে বেরিয়ে মানুষ যদি বইয়ের দিকে আসে, একটা বই হাতে নিয়ে বারবার পড়ার যে পাঠযোগ্যতা বাড়বে বলে আমি মনে করি। মানুষের এখন চতুর জিনিসের প্রতি আগ্রহ বেশি। কবিতার দিকে আগ্রহ যদি যায়, চতুর মাত্রার কবিতার যেগুলো আছে সেগুলোর দিকে আগ্রহ বেশি। প্রকৃত কবিতা যার ছন্দ আছে, কিংবা তত্ত্বনির্ভর বা ভালো উপমা রয়েছে সেদিকে লক্ষ খুব কম। এখন লেখকের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে ফেসবুকভিত্তিক রসনা প্রবৃত্তিকে ধারণ করে। কিন্তু প্রকৃত লেখক হতে হলে যে প্রস্তুতি দরকার, তা নেই। তার লেখাকে ধারণ করতে যে প্রস্তুতি প্রশিক্ষণ, শিক্ষণ দরকার, সেটা কম হচ্ছে বলেই অধিকাংশ বই-ই বই হিসেবে দাঁড়ায় না। এবারের বইমেলায় পাঁচ থেকে ছয় হাজার বইয়ের কথা আমরা শুনব। তার মধ্যে ৫০০ বইও প্রকৃত প্রস্তাবে বই কি না, আমরা দেখব!

পুলিশবন্ধু: তাহলে মানসম্মত বই রচনা, প্রকাশনা ও প্রচারে বাংলা একাডেমি কী ভূমিকা রাখছে?

মুহম্মদ নূরুল হুদা: যেসব প্রকাশক, যেসব বই পাণ্ডুলিপি পরীক্ষা করে প্রকাশ করে, তাদের বই মানসম্পন্ন হয়। ন্যূনতম ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমির প্রায় প্রতিটি বই মানসম্পন্ন। কারণ প্রতিটি বইয়ের পাণ্ডুলিপি দুজন রিভিউয়ার দেখেন। দেখার পর লেখকের মেধাস্বত্ব থেকে শুরু করে সব পরীক্ষা করে দেখার পর বইটি প্রকাশ করা হয়। যদিও আমরা শতভাগ নিশ্চয়তা দিতে পারব না। তবে এটুকু নিশ্চয়তা দেওয়া যায়, এগুলো পরিচ্ছন্ন বই। শিল্পকলা একাডেমি, শিশু একাডেমি, ইসলামিক ফাউন্ডেশন এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বই প্রকাশ করে। কিন্তু বাংলাবাজারের বড় প্রকাশকদের বই ঠিক আছে। এই বইগুলো মানসম্পন্ন বলতে পারি। কিন্তু হঠাৎ গজিয়ে ওঠা প্রকাশনী আজকে আছে, কালকে নেই, তারা কীভাবে লিখবে না লিখবে এটা দেখা সরকারের দায়িত্ব। এই বইগুলোর মান যাচাই করার জন্য আমাদের ব্যবস্থা রয়েছে। কোনো বই আমাদের নীতিমালার বিরুদ্ধে গেলে তা আইনানুগভাবে বন্ধ করি। গতবার একটি বই বাতিল করা হয়েছে।

পুলিশবন্ধু: মেলায় পাঠকের চেয়ে দর্শকের আগমন হয় অনেকগুণ বেশি। এই দর্শকদের পাঠাভ্যাস গড়ে তুলতে কী করা যায় বলে মনে করেন?

মুহম্মদ নূরুল হুদা: দর্শক এলেই পাঠাভ্যাস গড়ে উঠবে। কারণ দেখাদেখিরও একটা ব্যাপার রয়েছে। দেখতে দেখতে তারা বই কিনবেন। তখন তারাও বই পড়ার প্রতি উৎসাহী হবেন। পাঠাভ্যাস গড়ে তুলতে প্রচারের কোনো বিকল্প নেই। ট্রানজিবল, ডিজিটাল উভয় প্রচারই দরকার। প্রচারই প্রসার।

পুলিশবন্ধু: সার্বিকভাবে এই মেলা বাংলা সাহিত্যে কী অবদান রাখছে বলে মনে করেন?

মুহম্মদ নূরুল হুদা: মানুষের সভ্যতার বাংলা সাহিত্যে যে প্রবাহমানতা এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমির অমর একুশে গ্রন্থমেলা এ উপমহাদেশেই নয়, সারা পৃথিবীতে দীর্ঘস্থায়ী মেলা। এর অবশ্যম্ভাবী ফল রয়েছে। সেটা হলো মানুষ সৃষ্টিশীল। সৃষ্টিশীলতায় মানুষের অভিগম। সৃষ্টিশীলতার সবচেয়ে বেশি প্রদর্শনী দেখি, প্রকাশিত গ্রন্থের ভেতর। মানুষের চিন্তা ছাড়া পদ্ধতি এগিয়ে যায় না। মানুষ বিবর্তিত হয়। তার চিন্তা বিবর্তিত হয়। আজকে মানুষ যে চিন্তা করে তা আগামীতে মানুষ অন্য চিন্তায় চলে যায়। এই ডায়লেটিক পদ্ধতিকে বাস্তবভাবে উপস্থাপন করার জন্য বাংলা একাডেমির এই বইমেলা যে কোনো বইমেলার মতো ফিরে আসে। কেননা, এই সেই বইমেলা জাতি, রাষ্ট্র, বাংলাদেশকে, তার উৎপত্তির আদর্শ, যৌক্তিকতাকে ধারণ করে আছে। বাংলা, বাঙালিয়ানা ও মানবিকতা। এই তিনটিকে যুক্ত করেই বইমেলা এগিয়ে চলেছে।

পুলিশবন্ধু: বিদেশের কোনো প্রকাশক-লেখক এই বইমেলায় অংশ নিতে পারেন কি না?

মুহম্মদ নূরুল হুদা: এই বইমেলা বাঙালির বইমেলা। এই বইমেলা আমরা আন্তর্জাতিক বিষয় যেগুলো রয়েছে, সেগুলোকে ধারণ করি। কিন্তু আন্তর্জাতিক মহল থেকে, বিদেশ থেকে কোনো স্টলকে বই বিক্রির জন্য কোনো সুযোগ দেওয়া হয় না। তাদের জন্য সরকার অন্য একটি মেলা করতে পারে। যেমন ঢাকা বইমেলা। এই বইমেলা এখন হয় না। আশা করছি আগামীতে আবার ঢাকা বইমেলা শুরু হবে, যা কলকাতার বইমেলার মতো আন্তর্জাতিক বইমেলা। কলকাতা বইমেলা কয়েক দিন আগে শেষ হয়ে গেল। সেই বইমেলা বাংলা একাডেমির যাত্রা, জ্ঞান বিবর্তনের যাত্রা, সারা পৃথিবীর জ্ঞান বিবর্তনের যাত্রাকে সমুন্নত করে।

পুলিশবন্ধু: মেলা সামনে রেখে লেখক, প্রকাশক ও পাঠকের প্রতি আপনার কোনো আহ্বান আছে কি না?

মুহম্মদ নূরুল হুদা: মেলায় আসুন, বই পড়ুন, বই পড়ে শিখুন। শিখে আপনিও নতুন কিছু লিখুন। আপনার লেখা প্রকাশিত হোক। নতুন লেখক, পাঠক পাওয়ার একমাত্র লক্ষ্য হলো লেখা, বই প্রকাশিত হওয়া। প্রকাশিত হওয়ার পর বইয়ের স্টল থেকে মানুষের কাছে তা পৌঁছে দেওয়া। এই যে প্রবাহ, জ্ঞানের সৃষ্টি ধারণের বিমূর্ত প্রবাহ।

অনুগ্রহ করে এই সংবাদটি আপনার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও খবর

© একটি 'নাগরিক সিন্ডিকেট' প্রচেষ্টা এবং মোঃ জসীমউদদীন (রুমান) কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Site Customized By NewsTech.Com