1. policebondhu@gmail.com : Jasemuddin Ruman : Jasemuddin Ruman
  2. jasemruman@gmail.com : policebondhu :
  3. propertypokkho@gmail.com : Jasem Ruman : Jasem Ruman
সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি :
'পুলিশবন্ধু ডট কম' সংশ্লিষ্ট সকলের সতর্কতার জন্য জানানো যাচ্ছে যে, 'পুলিশবন্ধু ডট কম' এর 'সম্পাদক, প্রকাশক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা' জনাব মোঃ জসীমউদদীন (রুমান) এর ব্যক্তিগত ব্যাংক একাউন্ট এবং বিকাশ/নগদ/রকেট/উপায় এর '০১৭১২ ৩৯২৫৭০(পার্সোনাল)' একাউন্ট ছাড়া অন্য কোন মাধ্যমে 'পুলিশবন্ধু ডট কম' এর পক্ষে কোন ধরণের আর্থিক লেনদেন পরিচালিত হয়না। অতএব, অন্যকোন মাধ্যমে 'পুলিশবন্ধু ডট কম' বিষয়ক আর্থিক লেনদেন না করার জন্য সবাইকে সম্পূর্ণভাবে নিষেধ করা হচ্ছে। সতর্কতায়:- 'পুলিশবন্ধু ডট কম' কর্তৃপক্ষ।

বেকারত্ব নিয়ে বাড়াবাড়ির চেয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কার্যকর উদ্যোগ দেখতে চাই

  • প্রকাশকাল : বৃহস্পতিবার, ২৬ মে, ২০২২

পুলিশবন্ধু, সম্পাদকীয় ডেক্স:
বেকারত্ব! একটি অভিশপ্ত শব্দ। এই শব্দটি পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার বহুমুখী প্রতিযোগিতা সৃষ্টিকারী সবচেয়ে সফল অস্ত্র। বেকারত্ব নিয়ে গবেষণা, আলোচনা ও বাড়াবাড়ির কোন শেষ নেই।

কদিন আগে এক টিভি চ্যানেলের আলোচনা অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী অংশ নিয়েছিলেন। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলছিলেন, বাংলাদেশে বেকারত্ব নেই। পরে অবশ্য তিনি তাঁর বক্তব্য আরও পরিষ্কার করে বললেন, শিক্ষিত ছেলেমেয়েদের মধ্যে বেকারত্ব আছে। তবে যাঁরা শিক্ষিত নন, তাঁদের মধ্যে নেই।

অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা মণ্ডলীর সম্মানিত সদস্য জনাব সালমান এফ রহমান (এম.পি.) জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আয়োজিত এক সেমিনারে বলেন (বাংলাদেশ প্রতিদিন, ১২ মে ২০২২) যে, , দেশে বেকারত্ব নেই। ফসল কাটার জন্য কৃষি শ্রমিকের সংকট এবং পোশাক শিল্পে কাজের জন্য শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না— আলোচিত দুজনেরই বক্তব্যের মূল ভিত্তি ছিল এ তথ্য।

আসল কথা হচ্ছে, বেকারত্ব আছে পৃথিবীর সব দেশেই, বাংলাদেশেও আছে। প্রধানত পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় বেকারত্ব সম্পূর্ণ দূরীকরণ কাম্য বলে মনে হয় না, সম্পূর্ণভাবে সম্ভবও নয় । বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে বেকারত্বের হার মোট জনশক্তির ৫ শতাংশ প্রায়। বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায়ই এটা তেমন বেশি নয়। তবে জনশক্তির কোনো কোনো অংশে, বিশেষ করে কম বয়সী তরুণ ও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী ‘শিক্ষিত’ গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে এ হার তুলনামূলক বেশি। সালমান এফ রহমানও যথাযথই বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অপ্রয়োজনীয় ডিগ্রি নেওয়া তরুণেরা চাকরি পাচ্ছেন না।

একগুচ্ছ সংখ্যা যে সব সময় প্রকৃত পরিস্থিতির প্রতিফলন ঘটায় না, তার প্রমাণ পাওয়া যায় সরকারেরই একটি প্রতিষ্ঠানের করা আরেক জরিপ থেকে। দেশে প্রচ্ছন্ন বেকারের সংখ্যা ১ কোটি ৩৮ লাখ, যাঁদের ৪৫ দশমিক ৩ শতাংশ সেবা খাতে, ৩০ দশমিক ৬ শতাংশ কৃষিতে ও ২৪ দশমিক ১ শতাংশ শিল্প খাতে নিয়োজিত। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ এ জরিপ পরিচালনা করে। প্রচ্ছন্ন বেকারত্ব বলতে বোঝানো হয়েছে, একটি পরিস্থিতি কোনো ব্যক্তির কাজ কর্মঘণ্টা, উপার্জন, উৎপাদনক্ষমতা, শিক্ষা বা দক্ষতার বিচারে যথাযথ নয় (দ্য ডেইলি স্টার, ১৩ অক্টোবর ২০১৯)। কোভিড মহামারির এই দুই বছরে পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি, তা হলফ করেই বলা যায়।

আরও কতগুলো বিষয় আছে, যা বিবেচনায় ছিল কি না, নিশ্চিত নই।

এক. মাগুরা জেলা সদরের ছোট্ট শহরটিতে অসংখ্য ব্যাটারিচালিত তিন চাকার গাড়ি (এ চিত্র সারা দেশেই)। গাড়ি চলতে চলতে চালককে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আয় উন্নতি কেমন?’ তিনি বললেন, ‘আগে তো ভালোই ছিল, এখন গাড়ি হয়ে গেছে কয়েক গুণ, যাত্রী তো বাড়ে নাই।’ একজন চালকের যা আয় হওয়ার কথা ছিল, তাই ভাগ হয়ে গেছে দু-তিনজনের মধ্যে। এর অতিরিক্ত অনুষঙ্গ হচ্ছে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির কারণে যত্রতত্র যানজট।

দুই. যেখানে সবজি, ফল বা মুদির দোকান তিন–চারটি করে থাকলেই যথেষ্ট হতো, সেখানে দোকান এর তিন-চার গুণ। পুঁজিবাদী তত্ত্বে এর ফলে প্রতিযোগিতা বেড়ে গ্রাহকের সুবিধা হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে হয় উল্টোটা। কারণ সীমিতসংখ্যক ক্রেতার কাছ থেকেই তাঁর দোকানভাড়া, মাস্তানের চাঁদা ও সংসার খরচ বের করে নিতে হবে। অল্প লাভে বেশি বিক্রির সুযোগ যেহেতু নেই, বেশি লাভে অল্প বিক্রিতেই তাঁদের সন্তুষ্ট থাকতে হয়। এর সবই হচ্ছে বিকল্প কাজের সুযোগ না থাকায়। এটাও কি একধরনের প্রচ্ছন্ন বেকারত্ব নয়? অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, আমাদের প্রবৃদ্ধি হচ্ছে অনেকটাই কর্মসংস্থান সৃষ্টি না করে।

এ ছাড়া পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের কর্মক্ষম জনশক্তির (১৫ থেকে ৬৪ বছর) মাত্র ৫৮ দশমিক ২৩ শতাংশ কর্মরত অথবা বেকার। বাকি ৪১ দশমিক ৭৭ শতাংশ শ্রমবাজারের বাইরে অবস্থান করছেন। বলা বাহুল্য, এর বড় অংশ নারী। উন্নত বিশ্বের ক্ষেত্রে (ওইসিডিভুক্ত দেশসমূহ) এ সংখ্যাগুলো যথাক্রমে ৭২ দশমিক ৮ ও ২৭ দশমিক ২ শতাংশ। যথাযথ কাজের অভাব এই বিপুল জনশক্তিকে শ্রমবাজারের বাইরে রাখতে ভূমিকা রাখছে কি না, সেটাও বিবেচনার দাবি রাখে।

ধান কাটার জন্য কৃষিশ্রমিক কেন পাওয়া যায় না, তার ব্যাখ্যা পেতে ফিরে যেতে হয় শিক্ষাব্যবস্থায়। গ্রামগঞ্জের কলেজ থেকে লেখাপড়া তেমন না শিখে ডিগ্রি পেয়েছেন যে ছেলেটি, কৃষিশ্রমিকের কাজ তাঁর কাছে সম্মানহানিকর বলে প্রতীয়মান হয়, যদিও এ কাজে দৈনিক পারিশ্রমিক ৬০০ টাকা, তিন বেলা খেয়ে। আবার তাঁর ডিগ্রির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোনো কাজের যোগ্যতাও তাঁর নেই। তিনি বরং গ্রামের চায়ের দোকানে অলস সময় কাটাচ্ছেন সরকারের কোনো দপ্তরে পিয়নের চাকরির জন্য ঘুষের টাকা জোগাড়ের অপেক্ষায়। অথবা স্বপ্ন দেখছেন, ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালিতে পৌঁছে ভাগ্য পরিবর্তনের।

যে অপ্রয়োজনীয় ডিগ্রিগুলোর কথা উঠেছে, তা বিতরণ করছে প্রধানত সরকারি অনুদানে পরিচালিত অথবা অনুমোদনপ্রাপ্ত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। কিছুদিন আগে প্রাপ্ত এক তথ্যে জানা গেল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া পিএইচডি ডিগ্রির বেশির ভাগ বাংলা সাহিত্য ও ধর্মশিক্ষায়, যার সত্যিকার অর্থে বাস্তব প্রয়োগের সম্ভাবনা ক্ষীণ। মৌলিক বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, চিকিৎসাশাস্ত্র—কোথাও কোনো অবদান নেই বাংলাদেশের (একমাত্র ব্যতিক্রম কৃষিবিজ্ঞানীরা)। মালয়েশিয়া থেকে ছেলেমেয়েরা একসময় পড়তে আসতেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, এখন ঘটছে উল্টোটা। মালয়েশিয়া এখন সেমিকন্ডাক্টরের বড় উৎপাদক। প্রচুর ইলেকট্রনিক-সামগ্রী, এমনকি গাড়ি আসে বাংলাদেশে মালয়েশিয়া থেকে; আসে ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড থেকেও। ফ্রিজ, টিভি অবশ্য আজকাল বেশ তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশে, তবে তা-ও বেশির ভাগ সংযোজন। যমুনা নদীর ওপর রেলসেতুর পরিকাঠামো তৈরি হচ্ছে ভিয়েতনাম ও মিয়ানমারে। মিয়ানমার পারে, আমরা পারি না। পোশাক সেলাইয়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম কারখানা হয়েই আমরা উল্লসিত। সর্বোচ্চ ব্যয়ে সবচেয়ে কম বেতনের নির্মাণশ্রমিক রপ্তানি করেই আমরা পরিতৃপ্ত। এ তৃপ্তির ফাঁদ থেকে বাংলাদেশকে বেরিয়ে আসতে হবে।

প্রচ্ছন্ন বেকারত্বের সবচেয়ে বড় ক্ষতি হচ্ছে একজন কর্মী তাঁর জীবনের সবচেয়ে উৎপাদনশীল সময়টিতে তাঁর সামর্থ্য ও ইচ্ছার তুলনায় অনেক কম কাজ করছেন, অনেক কম উপার্জন করছেন। ২০৪১ সালে ‘উন্নত দেশ’ হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে সাধারণ মানুষের প্রকৃত উপার্জন ব্যাপক হারে বাড়াতে হবে। ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে মূল্যস্ফীতিসহ মাথাপিছু আয় ১২ শতাংশ বৃদ্ধি হিসাব করে এ লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে না। ২০৪১ এখনো অনেক দূর মনে হতে পারে, প্রকৃতপক্ষে ১৯ বছর খুব বেশি সময় নয়। এটুকু সময়ে নিম্নমধ্যম থেকে উচ্চ আয়ের দেশে পৌঁছাতে পারেনি কোনো দেশই। বাংলাদেশকে এ অসাধ্যসাধন করতে হলে বিপুলসংখ্যক কর্মীর সুযোগ ও সম্ভাবনার অপচয় অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।

আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সহ সামাজিক,রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বিনষ্টের ক্ষেত্রেও বেকারত্ব নামক অভিশাপের প্রভাব প্রমাণিত সত্যরূপে বিশ্বের সকল দেশে স্বীকৃত। ইদানিং ঢাকার আশেপাশের জেলা উপজেলা সহ সারা দেশে ডাকাতির ঘটনা বেড়ে যাওয়াটাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে বেকারত্বকে বেশি দায়ী করতে চাই। সময় থাকতে যদি আমরা আমাদের দেশের জনশক্তির সঠিক ও কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত না করতে পারি। আমরা যদি আমাদের জনশক্তির জন্য উপযুক্ত কাজের ব্যবস্থা করে দিতে ব্যর্থ হই। তবে ২০৪১ সালে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হওয়াতো দূরের কথা জাতি হিসেবে নিজেদের অস্তিত্ব টেকানোটা হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

তাই, সরকারের দায়িত্বশীল কর্তাব্যক্তিবর্গের কাছে আমার আন্তরিক আবেদন, দেশের জনশক্তিকে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর দিকে জোর নজর দিন। দরকার হলে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অধীনে কৃষি কোর চালু করুন। বাংলাদেশ পুলিশের অধীনে কর্মসংস্থান ক্লাব ও কর্মসংস্থান পুলিশিং চালু করুন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাধ্যতামূলক কর্মমূখী শিক্ষা ও উৎপাদনমূখী কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করুন।
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাকে সত্যিকার অর্থে সবমানুষের সোনার বাংলায় পরিণত করুন।

মোঃ জসীমউদদীন (রুমান)
গবেষক, সম্পাদক ও প্রকাশক
jasemruman@gmail.com

অনুগ্রহ করে এই সংবাদটি আপনার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও খবর

© একটি 'নাগরিক সিন্ডিকেট' প্রচেষ্টা এবং মোঃ জসীমউদদীন (রুমান) কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Site Customized By NewsTech.Com