পুলিশবন্ধু, আলোচিত সংবাদ ডেক্স:
‘জাহাজের ওপরে ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অবস্থান করছে প্রায় ৫০ জলদস্যু। তারা একেকজন একেক পয়েন্টে আছে। আমরা নিরাপদে আছি। তবে আমাদের নানাভাবে ভয় দেখাচ্ছে তারা’।
ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদুস্যদের কবলে পড়া বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ ‘এমভি আব্দুল্লাহ’র চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খাঁন সর্বশেষ এমন বার্তায় পাঠিয়েছেন মালিকপক্ষকে। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছে জাহাজের থাকা জিম্মি ২৩ নাবিক ও ক্রু।
এর আগে গতকাল দুপুর ১ টা ৪০ মিনিটে আরেকটি বার্তা পাঠান জিম্মি ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন। তিনি লিখেন, ‘প্লিজ আমাদের বাঁচান। সোমালিয়ান জলদস্যুরা আমাদের জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর ওপর চড়াও হয়েছে। তাদের হাতে রয়েছে ভারী অস্ত্রশস্ত্র’। এভাবেই বাঁচার আকুতি জানিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে ইংরেজিতে বার্তা পাঠান তিনি।
নৌ বাণিজ্য দপ্তরের প্রিন্সিপাল অফিসার ক্যাপ্টেন সাব্বির মাহমুদ বলেন, ‘মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর আর কারও সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি আমাদের। জাহাজটি জলদস্যুরা সোমালিয়ার উপকূলের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।’
কেএসআরএম গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে জাহাজের চিফ ইঞ্জিনিয়ার এএসএম সাইদুজ্জামান কেএসআরএম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুল করিমের কাছে আরেকটি মেসেজ পাঠান। তাতে তিনি জানান, তাদের মোবাইল ল্যাপটপসহ ব্যবহারের জিনিসপত্র নিয়ে নিচ্ছে জলদস্যুরা। তারপরও জাহাজের সঙ্গে সংযুক্ত থাকা মালিকপক্ষের ইন্টারনেট কানেকশন খোলা রাখতে বলা হয়েছে। যাতে কোনো মেসেজ থাকলে গোপনে তা বাংলাদেশে পাঠাতে পারেন।’
বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন সবার আগে হোয়াটসঅ্যাপে জলদস্যু দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার মেসেজ পাঠান আমাদের সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক ইফতেখারুল আলমের কাছে। তিনি জাহাজ নিয়ে দক্ষিণ চায়নাতে রয়েছেন। মেসেজটি তিনি আমাদের সভাপতির কাছে ফরোয়ার্ড করেন। এরপর সন্ধ্যার দিকে চিফ ইঞ্জিনিয়ার আরেকটি মেসেজ দিয়েছেন মালিকপক্ষের প্রধান নির্বাহীর কাছে। সেখানে তারা নিরাপদে আছেন বলে জানিয়েছেন। তখন জাহাজটি জলদস্যুরা সোমালিয়া উপকূলের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল।’
শুধু এমভি আব্দুল্লাহ নয়, আরও অনেক জাহাজের বাংলাদেশি নাবিক ও ক্রু সোমালিয়ান জলদস্যুদের কাছে অতীতে জিম্মি হয়েছিলেন। এদের কেউ ২০ মাস পর, কেউ ১০ মাস পর জিম্মি দশা থেকে মুক্তি পান। ২০১২ সালে সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে ২০ মাসেরও বেশি সময় জিম্মি থাকার পর বাংলাদেশি সাতজন নাবিক মুক্তি পান। ২০১০ সালের ২৬ নভেম্বর ভারত মহাসাগর থেকে মালয়েশিয়ার পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আলবেডোকে আটক করে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। এ সময় তারা জাহাজটিতে থাকা ২২ জন কর্মকর্তা ও ক্রুকে জিম্মি করে। ওই ২২ জনের মধ্যে ছিলেন ৭ জন বাংলাদেশি, ৭ জন পাকিস্তানি, ৬ জন শ্রীলঙ্কান এবং একজন করে ভারতীয় এবং ইরানি নাগরিক। এদের সবাই মুক্তিপণ দিয়ে দীর্ঘ সময় পর মুক্ত হয়েছিলেন।
কেএসআরএম গ্রুপের আরেকটি জাহাজ এমভি জাহান মনি সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পায় ১০০ দিন পর। জিম্মি হওয়ার আট মাস পর সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত হওয়ার ঘটনার সাক্ষী আছেন দুই বাংলাদেশি নাবিক। এদের একজন নাবিক জাফর ইকবাল। অন্যজন নাবিক গিয়াসউদ্দিন আজম খান। তারা আটক হওয়া এমভি মারিয়া মার্গারেট নামের জার্মান পতাকাবাহী জাহাজে কর্মরত ছিলেন।