পুলিশবন্ধু, আলোচিত সংবাদ ডেক্সঃ
নারায়ণগঞ্জের চনপাড়া এলাকার আলোচিত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য বজলুর রহমানকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। ১৮ নভেম্বর ২০২২ (শুক্রবার) বিকেলে উপজেলার পূর্বগ্রাম থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন গ্রেফতারের বিষয়টি সংবাদমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
র্যাব জানায়, গত ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ চনপাড়া একালার কায়েতপাড়ায় অভিযানে গেলে র্যাবের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। র্যাবের ওপর হামলার অভিযোগে চনপাড়ার প্যানেল চেয়ারম্যান-১ বজলুর রহমানকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১।
উল্লেখ্য যে, গত ১০ নভেম্বর ২০২২ রাতে র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ সিটি শাহীন নিহত হয়। সিটি শাহীনের সব অপকর্মের আশ্রয় প্রশ্রয়দাতা ছিলেন বজলু চেয়ারম্যান। এছাড়া র্যাবের ওপর হামলার নেতৃত্বও দেন বজলু।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের চনপাড়া বস্তিতে ২৪ ঘণ্টা প্রকাশ্যেই বিক্রি হয় মাদক। সহজলভ্য হওয়ায় ঢাকাসহ আশপাশের এলাকা থেকে চনপাড়ায় ভিড় জমায় মাদকসেবীরা। বস্তির নটি ওয়ার্ডের অন্তত ১১৪টি স্পটে বিক্রি হয় মাদক। কয়েকশ মাদক কারবারিকে আশ্রয়প্রশ্রয় দেন চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রের মাদক সম্রাট হিসেবে পরিচিত বজলুর রহমান।
অন্যদিকে, গত ৪ নভেম্বর ২০২২ নিখোঁজ হন বুয়েটছাত্র ফারদিন নূর পরশ। নিখোঁজের তিনদিন পর ৭ নভেম্বর ২০২২ নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ফারদিনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
এ হত্যাকাণ্ডের মামলা তদন্তে নামে একাধিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী। তদন্তের পর র্যাব বলে, পরশ হত্যার মূল রহস্য উদঘাটন করতে না পারলেও হত্যায় কারা জড়িত তা আমরা কিছুটা শনাক্ত করেছি। তার হত্যায় রায়হান গ্যাংয়ের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে আমরা সন্দেহ করছি। রায়হানের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। সে চনপাড়ায় মাদকের সঙ্গে জড়িত।
ফারদিন হত্যাকাণ্ডের পর আবারও আলোচনায় আসে মাদকসহ নানা অপরাধের দুর্গ হিসেবে পরিচিত চনপাড়া বস্তি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বলেন, বজলুর রহমানের অনুমতি ছাড়া একজন পুলিশও এলাকাতে ঢোকে না। প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি করছে, খাচ্ছে। পুরো এলাকাই তার নিয়ন্ত্রণে। বজলুর রহমান রূপগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সদস্য এবং কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের (চনপাড়া) সদস্য। একই সঙ্গে তিনি কায়েতপাড়া ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যানও।
চনপাড়া এলাকার তিন দিকে নদী, এক দিকে খাল। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় যোগাযোগবিচ্ছিন্ন চনপাড়ায় এখন লক্ষাধিক লোকের বাস। সড়কপথে এ এলাকায় যেতে হলে ঢাকার ডেমরা হয়ে বালু নদের ওপর নির্মিত সেতু পার হতে হয়। স্থলপথে এটিই চনপাড়ায় প্রবেশের একমাত্র রাস্তা।
ভৌগোলিকভাবে জায়গাটি দুর্গম হওয়ায় এখানে ‘জোর যার মুল্লুক তার’ নীতি বহাল। গত ৪০ বছরে এলাকাটিতে শুধু মাদক কারবারকে কেন্দ্র খুন হয়েছেন কমপক্ষে ২৩ জন।