পুলিশবন্ধু, সংসদ-মন্ত্রীসভা ও সুশাসন ডেক্স:
সোমবার (৪ ডিসেম্বর) সারা দেশে প্রার্থীদের জমা দেয়া মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষ হয়েছে । যাচাই-বাছাই শেষে এক হাজার ৯৮৫ জন প্রার্থীকে বৈধ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে ৭৩১ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র। নির্বাচন কমিশনে (ইসি) দাখিল করা হলফনামার বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বেশ কয়েকজন প্রার্থীর সম্পদ অস্বাভাবিক বেড়েছে। কারও আবার কমেছে। কারও আবার স্ত্রীর তুলনায় নিজেরই স্বর্ণালংকার বেশি। আবার ঋণ নেয়ার তালিকায় নাম আসছে অনেকের। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে দেয়া হলফনামা এবং ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে দেয়া হলফনামা সূত্রে এসব বিষয় নিশ্চিত হওয়া গেছে।
হলফনামা অনুযায়ী যেসব প্রার্থীর সম্পদ বেড়েছে:
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন
সিলেট-১ সদর আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। সিলেট রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে জমা দেয়া নির্বাচনী হলফনামা অনুযায়ী তার বার্ষিক আয় প্রায় ১০ লাখ টাকা কমেছে। তবে অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হলফনামায় পেশা উল্লেখ করেছেন, রাজনীতি ও অন্যান্য। শিক্ষাগত যোগ্যতা দিয়েছেন স্নাতকোত্তর পাস।
হলফনামা অনুযায়ী, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বার্ষিক আয় ২৬ লাখ টাকার বেশি। বাড়ি ও দোকান ভাড়া থেকে প্রায় ৪ লাখ টাকা, পেশা থেকে ১২ লাখ ৬০ হাজার টাকা ও ব্যাংকের মুনাফা বাবদ প্রায় ৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা তিনি আয় করেন। ২০১৮ সালে বার্ষিক আয় ছিলো ৩৫ লাখ ৮৯ হাজার ১৭১ টাকা। ২৭ লাখ ৪১ হাজার ২২৪ টাকা আসতো শিক্ষকতা থেকে। আর বাকি টাকা বাসাভাড়া, ব্যবসা, শেয়ার বা সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য খাত থেকে আসতো। ২০১৮ সালের তুলনায় প্রায় ১০ লাখ টাকা আয় কমেছে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর। তবে আয় কমলেও স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ বেড়েছে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর। হলফনামায় বলা হয়েছে, বর্তমানে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা ছাড়িয়েছে, ২০১৮ সালে যা ছিল ৭ কোটি ১৫ লাখ টাকার কিছু বেশি।
নুরুল ইসলাম নাহিদ
সিলেট-৬ (গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় থেকে এবার তার আয় ও সম্পদ পাঁচ বছরের ব্যবধানে কিছুটা বেড়েছে। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম হলফনামায় নিজেকে রাজনৈতিক কর্মী উল্লেখ করেছেন। এবার তিনি বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন সোয়া ৫০ লাখ টাকা। যা ২০১৮ সালে ছিল সোয়া ১৬ লাখ টাকা। এবার তিনি ২ কোটি টাকার অস্থাবর সম্পদ দেখিয়েছেন। ২০১৮ সালে তা ছিল দেড় কোটি টাকা। এবার তার সোয়া ২৭ লাখ টাকার স্থাবর সম্পদ আছে বলে উল্লেখ করেছেন।
জি এম কাদের
গত পাঁচ বছরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের (জি এম কাদের) সম্পদ বেড়েছে তিনগুণের বেশি। আর দ্বিগুণের বেশি সম্পদ বেড়েছে তার স্ত্রী শেরীফা কাদেরের। ব্যাংকে নগদ টাকা, বাড়ি ভাড়া ও শেয়ারও বেড়েছে এ দম্পতির। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জমা দেওয়া হলফনামা থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে লালমনিরহাট-৩ আসন থেকে নির্বাচিত হন জি এম কাদের। তখন হলফনামায় তিনি উল্লেখ করেছিলেন, তার নগদ অর্থ ছিল ১৪ লাখ ৪৭ হাজার ৯৭৩ টাকা। এখন পাঁচ বছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯ লাখ ৮৮ হাজার ২৫৩ টাকা। আর স্ত্রী শেরীফা কাদেরের নগদ ছিল ২৭ লাখ ৬৪ হাজার ৭০১ টাকা, পাঁচ বছরে বেড়ে তা দাঁড়িয়েছে ৫৯ লাখ ৫৯ হাজার ৫৬৩ টাকা।
২০১৮ সালের হলফনামায় উল্লেখ ছিল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার জমা ছিল ১৩ লাখ ২ হাজার ৪৩৫ টাকা। এবার হয়েছে ৩৫ লাখ ৯৫ হাজার ৭৯৩ টাকা। স্ত্রীর ছিল ৪ লাখ ৭ হাজার ২৫৮ টাকা, তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ লাখ ৯ হাজার ৩৫৯ টাকা।
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ
সিলেট-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইমরান আহমদ। তার আয়ের পাশাপাশি বেড়েছে সম্পত্তিও। তবে মন্ত্রীর স্ত্রীর সম্পদ তার চেয়ে বেড়েছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেয়া হলফনামা অনুযায়ী, বার্ষিক আয় ৪৪ লাখ ৪০ হাজার ২৫১ টাকা। এর মধ্যে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য হিসেবে আয় ৩২ লাখ ৮৪ হাজার ১৯৬ টাকা দেখিয়েছেন। হলফনামা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, গত ১৫ বছরে ইমরান আহমদের আয় বেড়েছে তিন গুণ। এ ছাড়া মন্ত্রী ও তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পত্তির বেড়েছে ২২ গুণ। ২০০৮ সালে ইমরান আহমদ ও তার স্ত্রীর মোট অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ৩৪ লাখ আট হাজার টাকা। যা বর্তমানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাত কোটি ৭৭ লাখ পাঁচ হাজার ২৮ টাকা।
সালাম মুর্শেদী
খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও ব্যবসায়ী আবদুস সালাম মুর্শেদীর গত পাঁচ বছরে সম্পদ বেড়েছে প্রায় ৪৩ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের নির্বাচনী হলফনামায় দেয়া বিবরণীতে তার সম্পদ ছিল ৯৫ কোটি ১১ লাখ টাকার। আর দ্বাদশ নির্বাচনী হলফনামায় তার সম্পদ দেখানো হয়েছে ১৩৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।
প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ
গত পাঁচ বছরে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের সম্পদ বেড়েছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মেহেরপুর-১ (সদর ও মুজিবনগর) আসনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। নির্বাচন কমিশনে (ইসি) দাখিল করা হলফনামা অনুযায়ী তিনি কৃষি থেকে বছরে আয় ২৫ লাখ ১৮ হাজার টাকা, ব্যবসা থেকে ১৭ লাখ ৭৯ হাজার ৩৭৪ টাকা, শেয়ারবাজার ও ব্যাংক আমানত থেকে ৪ লাখ ২৮ হাজার ২০১ টাকা এবং পারিশ্রমিক, ভাতা, সম্মানী হিসেবে ২৯ লাখ ৭৬ হাজার ২৭৫ টাকা আয় করেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় ফরহাদ হোসেনের হলফনামায় তার কাছে নগদ ছিল ৬ লাখ টাকা। এ ছাড়া তখন তার ছিল ৮০ লাখ টাকা দামের একটি গাড়ি, স্বর্ণ ও মূল্যবান ধাতু ছিল ২০ লাখ টাকার, আসবাব ছিল ৫ লাখ টাকার এবং ব্যবসা ও অন্যান্য সম্পদ ছিল ৩০ লাখ টাকার। ওই বছর তার সঞ্চয়পত্র ছিল ১ লাখ ৫ হাজার ৩৫৩ টাকার। কৃষি থেকে আয় ছিল ৪ লাখ ও অন্যান্য খাত থেকে ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
ফজলে হোসেন বাদশা
রাজশাহী-২ (সদর) আসনে বর্তমান এমপি ও ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশার সম্পদ এবং আয় দুটিই বেড়েছে। তিনি এবার চতুর্থবারের মতো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এর আগে তিনবার এমপি হয়েছেন। এবার ফজলে হোসেন বাদশার এবার বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছে এক কোটি ৭৮ লাখ ১৭ হাজার ৪৪২ টাকা। ২০১৮ সালের হলফনামায় তার আয় ছিল সাত লাখ ৫০০ টাকা। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তার আয় দেখানো হয়েছিল ছয় লাখ ২৪ হাজার ৭৭২ টাকা। তার পাঁচ বছর আগে ২০০৮ সালে তার বার্ষিক আয় ছিল দুই লাখ দুই হাজার টাকা।
মাশরাফি বিন মুর্তজা
নড়াইল-২ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে আবারও মনোনয়ন পেয়েছেন জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। হলফনামা অনুযায়ী বর্তমানে তার বার্ষিক আয় ৮৮ লাখ ৫৪ হাজার ৪৫৮ টাকা। পাঁচ বছর আগে হলফনামায় যা ছিল ১ কোটি ৯৯ লাখ ১৮ হাজার ৭০০ টাকা। হলফনামায় মাশরাফি জানিয়েছেন, শেয়ার মার্কেটে ১৪ লাখ ১ হাজার ৯৫৩ টাকা, চাকরি ও বিভিন্ন সম্মানী বাবদ ২৩ লাখ ৩ হাজার ২০ টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে ৫১ লাখ ৪৯ হাজার ৪৮৫ টাকা আয় করেন।
স্ত্রীর তুলনায় স্বর্ণালংকার বেশি নদভীর
চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভীর কাছে তার স্ত্রীর তুলনায় স্বর্ণালংকার বেশি রয়েছে। ২০১৪ সালে জমা দেয়া প্রথম হলফনামায় আবু রেজা তার নিজের নামে ৫০ ভরি স্বর্ণালংকার দেখান। বিয়েতে উপহার হিসেবে এই স্বর্ণ পান বলে জানান তিনি। একই সময়ে তার স্ত্রীর নামে স্বর্ণ দেখানো হয় ১০ ভরি। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগেও দুজনের স্বর্ণের পরিমাণ একই দেখানো হয়। তবে এবার আবু রেজার মূল্যবান এ দাতুর পরিমাণ বেড়ে ৯০ ভরি হয়েছে। স্ত্রীর স্বর্ণ ও বেড়ে হয় ৫০ ভরি।
আবু রেজার ব্যাংকে জমা রয়েছে প্রায় ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। স্ত্রীর নামে ব্যাংকে জমা আছে ১৩ লাখ ৪১ হাজার টাকা। তার ২ কোটি ২৮ লাখ ৮৭ হাজার টাকার স্থায়ী আমানত দেখানো হয়েছে। পক্ষান্তরে স্ত্রীর স্থায়ী আমানত দেখানো হয়েছে ১৮ লাখ ৯৩ হাজার টাকা।
জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী
সামশুল হক বর্তমানে আওয়ামী লীগের এমপি হলেও এবার তাকে মনোনয়ন দেয়নি দল। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্রপ্রার্থী হয়েছেন। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় সামশুল হক চৌধুরী অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ উল্লেখ করেছিলেন ২১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৬৯ টাকার। আর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ উল্লেখ করেছেন ৫ কোটি ৪১ লাখ ১৯ হাজার ৫৯০ টাকার। এ ছাড়া ১০ হাজার ৩২ দশমিক ৭ ইউএস ডলার আছে বলে সম্পদ বিবরণীতে উল্লেখ করেছেন তিনি। এবার তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ দেখানো হয়েছে ৩ কোটি ৫০ লাখ ১৭ হাজার ১৭২ টাকার। ২০০৮ সালের নির্বাচনী হলফনামায় স্ত্রীর কোনো অস্থাবর সম্পত্তি ছিল না। সেই হিসেবে এই দম্পতির অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৪১ গুণ।
সামশুল হক তার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফমনামায় নগদ টাকার পরিমান উল্লেখ করেছেন ২ লাখ ৫৩ হাজার ৬২৪ টাকা। আর স্ত্রীর নামে নগদ টাকার পরিমান উল্লেখ করেছেন ২৮ লাখ ২৬ হাজার ৯৮৬ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার নামে ৬১ লাখ ৬৭ হাজার ৩৯ টাকা জমা আছে বলে উল্লেখ করেছেন।
তৈমুর আলম খন্দকার
২০২২ সালের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র থেকে মেয়র পদে নির্বাচন করেন তৈমুর আলম খন্দকার। সে সময় তার দাখিল করা হলফনামা ও এবারের সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে দাখিল করা মনোনয়নপত্র বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। দুই বছরের ব্যবধানে তার স্থাবর সম্পদ হিসেবে কৃষি ও অকৃষিজমির পরিমাণ কমেছে। তবে গত দুই বছরে নগদ টাকা, ব্যাংকে জমা করা অর্থসহ অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে। পাশাপাশি বার্ষিক আয় বেড়েছে দেড় গুণ। সেই সঙ্গে গত দুই বছরে তার স্ত্রীর নামে নগদ টাকা, ব্যাংক জমাকৃত অর্থ, এফডিআরসহ অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ৬৬ গুণ।
শমসের মুবিন চৌধুরী
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আলোচিত প্রার্থী তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী শমসের মুবিন চৌধুরীর। তিনি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০১৫ সালে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে ২০১৮ সালের ৮ ডিসেম্বর বিকল্পধারা বাংলাদেশে যোগ দেন। এরপর নির্বাচনে বিকল্পধারার মনোনয়ন নিয়ে সিলেট-৬ আসনে প্রার্থী হন।
হলফনামা অনুযায়ী শমসের মুবিন চৌধুরীর সম্পদ কমেছে। ২০১৮ সালে হলফনামায় তার বার্ষিক আয় দেখানো হয় প্রায় পৌনে ২ কোটি টাকা। কিন্তু এবার তা দেখিয়েছেন মাত্র ৮ লাখ টাকার কিছু বেশি। আয়ের পুরোটাই তিনি ‘শেয়ার, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানত’ থেকে পান বলে দেখানো হয়েছে। আয় কমার কারণ হলো ২০১৮ সালের মতো এবার তার ব্যাংক ডিপোজিট ও সেভিং সার্টিফিকেট মুনাফা এবং পেশাগত আয় নেই। ২০১৮ সালে এ তিন খাতে তিনি বার্ষিক ২৫ লাখ ৫৩ হাজার ২১৫ টাকা আয় করতেন। এ ছাড়া ২০১৮ সালে ‘শেয়ার, সঞ্চয়পত্র/ব্যাংক আমানত’ খাত থেকেই তিনি বার্ষিক আয় করতেন ১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।
হলফনামায় সম্পদ কমেছে যেসব প্রার্থীর:
তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ
তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদে ২০০৮ সাল থেকে চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া-বোয়ালখালী আংশিক) আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসছেন। এবার পুনরায় তিনি এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন। জমা দেয়া হলফনামায় আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সম্পাদক পেশা হিসেবে শিক্ষকতা ও ব্যবসা উল্লেখ করেছেন।
হলফনামায় দেখা যায়, হাছান মাহমুদের ব্যক্তিগত ব্যাংকঋণ রয়েছে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক থেকে এই ঋণ নেয়া হয়। এ ছাড়া অন্যান্য জামানতবিহীন ঋণ রয়েছে ৯১ লাখ টাকা। ভাইদের কাছ থেকে ঋণ রয়েছে ১২ লাখ টাকা। এছাড়া কৃষি খাতে আয় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট ও দোকান ভাড়া খাতে আয় ১ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। ব্যাংক ও অন্যান্য খাত থেকে সম্মানী বাবদ হাছান মাহমুদের আয় ১ লাখ ২২ হাজার ২৬৩ টাকা। ২০১৮ সালে তার মোট ঋণ ছিল ১ কোটি ২১ লাখ ১০ হাজার ৯৪৮ টাকা। এর মধ্যে জিপ গাড়ি বাবদ ঋণ ১৫ লাখ ১০ হাজার ৯৪৮ টাকা, জামানতবিহীন ঋণ ৯৬ লাখ টাকা উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া ভাইদের কাছ থেকে ঋণ ১০ লাখ টাকা দেখানো হয়েছিল।
শামীম ওসমান
নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী এই সংসদ সদস্যের গত ৫ বছরে নিজের সম্পদের পরিমাণ কমলেও বেড়েছে ঋণ। যদিও তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে। গত ২৯ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হলফনামায় উল্লেখ করা তথ্য অনুযায়ী, পাঁচ বছর আগে শামীম ওসমানের নামে ১০ কোটি ৬০ লাখ ৭৪ হাজার ৮৩৯ টাকার অস্থাবর সম্পদ ছিল। যা কমে দাঁড়িয়েছে ৭ কোটি ৯৮ লাখ ৬৩ হাজার ৫৪৭ টাকায়। বন্ধু ও ব্যাংকের কাছে একক ও যৌথভাবে তিনি দেনা ও ঋণ আছেন ২২ কোটি ৬ লাখ ১২ হাজার ৩৭৬ টাকা। ৫ বছর আগে ঋণের পরিমাণ ছিল ১৩ কোটি ৮৮ লাখ ৭ হাজার ৮১৭ টাকা।