পুলিশবন্ধু, সুশাসন চক্র ডেক্স:
বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে পুলিশের নন-ক্যাডার সদস্যদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। ড্রেসরুল প্রণয়ন ছাড়াও পুলিশে নন-ক্যাডার নীতিমালার দাবি তুলেছেন তারা। এ ছাড়া পুলিশ পরিদর্শকরা পদোন্নতির পর ষষ্ঠ গ্রেডে বেতন-ভাতা চাইছেন। তারা বলছেন, অন্যান্য ক্যাডারে প্রথম শ্রেণির পদমর্যাদার কর্মকর্তারা যে সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন, তার সঙ্গে তাদেরও সমন্বয় করা উচিত।
এসব দাবি নিয়ে শুক্রবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে নন-ক্যাডার পুলিশ সদস্যদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন’। দাবি-দাওয়া বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার ইচ্ছা ব্যক্ত করা হয়েছে।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক পুলিশ সদস্য রাতে গণমাধ্যমকে জানান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের দাবি-দাওয়ার কথা অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন। নন-ক্যাডার সদস্যদের মধ্যে অসন্তোষের কথাও তারা জানিয়েছেন। এর আগে গতকালই এ সংগঠনের সদস্যরা পলওয়েলে তাদের কার্যালয়ে বৈঠক করেছেন। সেখানে কনস্টেবল থেকে পুলিশ পরিদর্শক পদে পদোন্নাতির জটিলতা এবং জট নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। এ ছাড়া র্যাঙ্ক ব্যাজ নিয়েও তারা কথা বলেছেন।
গতকাল রাতে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম বলেন, মাঠ পর্যায়ে নন-ক্যাডার পুলিশ সদস্যদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি হচ্ছে। অনেকে ১৫ বছরের মধ্যে ৩-৪টি পদোন্নতি পাচ্ছেন। তবে আমরা প্রথম শ্রেণির মর্যাদা পেলেও পদোন্নতি পাচ্ছি না।
তিনি আরও বলেন, ২১ বছর চাকরি করার সুবাদে আমি এখন অষ্টম গ্রেডে বেতন পাচ্ছি। পরিদর্শক থেকে সহকারী পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি পেলে তখন আবার এক ধাপ পিছিয়ে নবম গ্রেডে বেতন পাব। এটা বড় ধরনের বৈষম্য। যেহেতু পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের নেতা হিসেবে নন-ক্যাডার সদস্যদের জন্য কিছুই করতে পারিনি, তাই শনিবারের বৈঠক থেকে সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে চেয়েছি। তবে সহকর্মীদের অনুরোধে তা সম্ভব হয়নি। পরে রাতে দাবি-দাওয়া নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি।
অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তেজগাঁও থানার ওসি অপূর্ব হাসান বলেন, আমরা আশা করি, নন-ক্যাডার সদস্যদের সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে। দাবি-দাওয়া বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাই। নন-ক্যাডার সদস্যরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। রাষ্ট্রের জন্য প্রাণও দিচ্ছেন। আমাদের পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) আওতায় দেওয়ার দাবি তুলেছি। নন-ক্যাডার সদস্যদের জন্য আলাদা নীতিমালা ও ড্রেসরুল করার কথাও জানিয়েছি।
সূত্র জানায়, বর্তমানে পুলিশে নন-ক্যাডার সদস্য ১ লাখ ৯৯ হাজার ৫২৮ জন। দেশে ৬ হাজার ৮৯৮ জন ইন্সপেক্টর রয়েছেন। তাদের মধ্যে বড় একটি সংখ্যা সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতিযোগ্য। ২৪ হাজার ৪২৯ জন এসআই ও সার্জেন্টের মধ্যে বিপুলসংখ্যক সদস্য রয়েছেন পরিদর্শক পদে পদোন্নতিযোগ্য। অনেকের চাকরির বয়স ১৫ থেকে ২০ বছর পেরিয়ে গেলেও পদোন্নতি মিলছে না।
পুলিশের আরেক সদস্য বলেন, পরিদর্শকদের ড্রেসে বর্তমানে এক পিপসের বদলে দুই পিপসের দাবি তোলা হয়। এ ছাড়া এসআইদের ড্রেসে এক পিপস থাকার কথাও জানানো হয়। একইভাবে এএসআইদের ড্রেস কোডেও বদল চাওয়া হয়েছে। পরিদর্শক ও এসআইদের পিএসসির আওতায় দেওয়ার কথাও বলা হয়।
বর্তমান সরকার ২০১২ সালে পুলিশ পরিদর্শক পদটি দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে প্রথম শ্রেণির নন-ক্যাডার পদে উন্নীত করা হয়। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে কমর্রত নন-ক্যাডার (নবম গ্রেড) কর্মকর্তারা ষষ্ঠ গ্রেডে পদোন্নতি পান। কিন্তু পুলিশের ক্ষেত্রে নবম গ্রেডের কর্মকর্তারা পদোন্নতির পরও নবম গ্রেডে থেকে যান।