পুলিশবন্ধু বুলেটিনঃ
পার্বত্য এলাকা বান্দরবান ও রাঙামাটিতে অভিযান চালিয়ে হিজরতের উদ্দেশে নিরুদ্দেশ হওয়া ৭ তরুণকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের ৩ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযানে জব্দ করা হয়েছে বিপুল অস্ত্র ও গোলাবারুদ।
২০ অক্টোবার ২০২২ (বৃহস্পতিবার) রাতে র্যাবের পক্ষ থেকে এসব তথ্য জানানো হয়। বলা হয়, গ্রেপ্তার তরুণরা নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারকস্ফীয়ার’ সদস্য। আজ শুক্রবার র্যাবের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযানের সর্বশেষ তথ্য জানানো হবে।
এর আগে দুই দফায় অভিযানে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নিরুদ্দেশ হওয়া ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এদিকে গ্রেপ্তার পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদীরা কোন সংগঠনের তা র্যাব গতকাল রাত পর্যন্ত স্পষ্ট করেনি। তবে কিছুদিন ধরে নতুনভাবে গড়ে ওঠা জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) নাম ঘুরেফিরে আসছে। এই দলটি ‘বম পার্টি’ নামেও পরিচিত।
নতুন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে কেএনএফ-এর যোগসূত্র পাওয়ার পর পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় যৌথ অভিযান চলছে। জঙ্গিদের ধরতে সেনাবাহিনী ও র্যাব অভিযান চালাচ্ছে। বান্দরবানের রোয়াংছড়ি এবং রুমা উপজেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
অভিযানের ব্যাপারে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সমকালকে বলেন, পার্বত্য এলাকার গহিন বনে জঙ্গি আস্তানার খোঁজে ধারাবাহিক অভিযান চলছে। সবাইকে গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত অভিযান চলবে। যে সব এলাকায় অভিযান চলছে তা অত্যন্ত দুর্গম ও ঝুঁকিপূর্ণ।
র্যাবের দায়িত্বশীল সূত্র গণমাধ্যমকে জানায়, পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে যে সাত তরুণকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে ঘর ছাড়ে। পাহাড়ে গোপন আস্তানায় তারা এরই মধ্যে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্র জানায়, জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারকস্ফীয়া দুর্গম পাহাড়ে কেএনএফের ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ শিবির স্থাপন করেছে। এর আগে র্যাবের পক্ষ থেকে কথিত হিজরতের নামে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নিরুদ্দেশ হওয়া ৩৮ জনের তালিকা প্রকাশ করা হয়। এরপর পাহাড়ে অভিযান চালানোর কথা জানায় র্যাব। সব মিলিয়ে নিরুদ্দেশ ৫৫ জঙ্গি পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম পাহাড়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে ও অবস্থান করছে বলে তথ্য পাওয়া যায়।
র্যাব জানায়, ঘর ছাড়া তরুণদের অনেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম এলাকায় আত্মগোপনে রয়েছে। বিভিন্ন সংগঠনের ছত্রছায়ায় সেখানে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। গোপনে তারা উগ্রপন্থি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অভিযানের অংশ হিসেবে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় মাইকিং ও প্রচারপত্র বিতরণ করা হচ্ছে। জঙ্গিদের অবস্থান করার তথ্য দিতে পারলে ১ লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়ারও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে প্রচারপত্রে। এ ছাড়া উগ্রপন্থিদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হচ্ছে। পুরস্কার ঘোষণার পর এখন পর্যন্ত কেউ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জঙ্গিদের ব্যাপারে খোঁজ দেয়নি।
এদিকে, বান্দরবানের রুমা উপজেলার বিলাইছড়ি এলাকা থেকে গতকাল সকালে রাঙ্গুইয়া তঞ্চঙ্গ্যা নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাকে গত ১৫ অক্টোবর জঙ্গিগোষ্ঠী অপহরণ করে। বড়থলি ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের সদস্য রামাইয়া তঞ্চঙ্গ্যা জানান, অনেক খোঁজাখুঁজির পর রাঙ্গুইয়ার লাশ পাওয়া যাচ্ছিল না। বৃহস্পতিবার বিলাইছড়ির উলুছড়ি পাড়ার জঙ্গলে গলাকাটা অবস্থায় তার লাশ পাওয়া যায়। পরে এ বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।