পুলিশবন্ধু, অর্থ-বাণিজ্য ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ডেক্স:
প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১০ টাকা কমিয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল সরকার। ঘোষণা অনুযায়ী, ১ মার্চ (গত শুক্রবার) থেকে বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১৬৩ টাকায় পাওয়ার কথা। কিন্তু গতকাল শনিবার মার্চের দ্বিতীয় দিনেও কোথাও নতুন দামে সয়াবিন পাওয়া যায়নি। পরিবেশকেরা বলছেন, মিল থেকে নতুন দামের তেল সরবরাহ হয়নি। তবে মিলমালিকদের প্রতিনিধিরা বলছেন, নতুন দামের তেল ছাড়া হয়েছে, দোকানিরা মিথ্যা বলছেন।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেছেন, দু-এক দিনের মধ্যে বাজারে নতুন দামে তেল পাওয়া যাবে। তিনি আরও জানিয়েছেন, ভারত থেকে চলতি সপ্তাহেই ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ আসবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে গত ২০ ফেব্রুয়ারি দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনাসংক্রান্ত টাস্কফোর্স কমিটির বৈঠক শেষে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন, বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিনের দাম ১০ টাকা কমানো হয়েছে। ১ মার্চ থেকে ১৬৩ টাকায় প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল এবং ১৪৯ টাকায় খোলা সয়াবিন তেল কেনা যাবে।
জানতে চাইলে সিটিগ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিত সাহা দাবি করেন, ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে তাঁদের মিল নতুন দামের তেল সরবরাহ করছে।
পর্যাপ্ত তেল বাজারে ছাড়া হয়েছে। খুচরা বিক্রেতারা যাতে লোকসানে না পড়েন, সে জন্য মিল থেকে আগেই ছাড় দেওয়া হয়েছে।
তবে গতকাল পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারের মুদি দোকানি সিরাজুল ইসলাম বলেন, তাঁর দোকানে আগের কেনা ৭০০-৮০০ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল রয়েছে। নতুন দামের তেল কেনার জন্য তিনি গতকাল বাজারের মেসার্স ইমরোজ এন্টারপ্রাইজে লোক পাঠান।
কিন্তু পাওয়া যায়নি। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘মিলাররা আমাগো রক্ত-মাংস চুষে খাচ্ছে। তাঁরা আগে টাকা নিয়ে মাল ডেলিভারি দেন। আমার যে লস হবে, তা সারা বছর তেল বেচেও উদ্ধার করতে পারুম না।’
গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর বনশ্রী এলাকায়ও মেসার্স সুচনা জেনারেল স্টোরের মালিক মোজাম্মেল হোসেন জানান, তিনি নতুন দামের তেল সরবরাহ পাননি। একটু দূরে মা-বাবার দোয়া স্টোরের সেলিম আহমেদও একই কথা জানান।
ঢাকার দোহারের ইকরাশি বাজারের মেসার্স মিন এন্টারপ্রাইজের ব্যবসায়ী আসাদুজ্জামান মুঠোফোনে বলেন, নতুন দামের তেল কোনো কোম্পানিই সরবরাহ দিচ্ছে না।
মৌলভীবাজারের ভোজ্যতেলের পরিবেশক মেসার্স জব্বার স্টোরের মালিক আবদুল জব্বার বলেন, নতুন তেল এখনো সরবরাহ পাওয়া যায়নি।
তবে ব্যবসায়ীদের কথা সত্য নয় বলে দাবি করেছেন মেঘনা গ্রুপের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দোকানিরা সব সময় মিথ্যা কথা বলেন। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কম। এই মুহূর্তে কেউ তেল ধরে রাখবে না।’ তবে তিনি এ-ও বলেন, ১ মার্চ শুক্রবার ছিল। শনিবার ব্যাংক বন্ধ। রোববার থেকে সবাই তেল সরবরাহ পাবে।
এ ব্যাপারে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম বলেছেন, শুক্রবার থেকে মিলগেটে ১৬৩ টাকা সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যে ভোজ্যতেল সরবরাহ শুরু হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়বে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে নারী উদ্যোক্তাদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব গ্রাসরুট উইম্যান অন্ট্রাপ্রেনারস বাংলাদেশ (এজিডব্লিউইবি) আয়োজিত দিনব্যাপী সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
এ সময় প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ত্রয়োদশ মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলের সঙ্গে তাঁর আলোচনা হয়েছে। সেখানে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী বাংলাদেশে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ পাঠানোর বিষয়ে চিঠি ইস্যু করতে নির্দেশ দিয়েছেন। সেই চিঠি গতকাল তাঁরা হাতে পেয়েছেন। চলতি সপ্তাহে ভারত থেকে পেঁয়াজ আসবে।
শুল্ক ছাড় দিয়ে বাজারে নির্দিষ্ট ধরনের খেজুরের দাম কমানোর উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে বলে জানান আহসানুল ইসলাম। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের জন্য জায়েদি খেজুরের দাম কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রোববার এই খেজুরের খুচরা ও পাইকারি দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হবে।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘রমজানের আগে ভোক্তাদের যেন বাড়তি দামে পণ্য কিনতে না হয়, সে লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে। এতে নিত্যপণ্যের দাম যৌক্তিকভাবে কমে আসবে। নিত্যপণ্য নিয়ে ব্যবসায়ী বা অন্য কারও কাছে সরকার জিম্মি থাকবে না। কোনো অজুহাত সহ্য করা হবে না।’