পুলিশবন্ধু উদ্যোক্তা ও বাণিজ্য চক্র ডেক্স:
গাইবান্ধায় ভোজ্যতেলের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি দুই ফসলি জমিকে চার ফসলি জমিতে রূপান্তর, বন্যা সহনশীল আমনের নতুন জাতের সঙ্গে কৃষকদের পরিচয় এবং বস্তায় আদা, মরিচসহ সবজি চাষ পদ্ধতি বিষয়ে কৃষকসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে ইউনিয়নভিত্তিক মত বিনিময় কর্মসূচি পালন করছে গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
গত ২০ সেপ্টেম্বর বিকেলে সদর উপজেলার বাদিয়াখালী ইউনিয়নের বটতলা নামক স্থানে স্থানীয় কৃষকদের সহ্যোগিতায় আমনের অগ্রিম ফসল ব্রি-৭৫ ধান কাটার মধ্য দিয়ে কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। এদিন ছোট ছোট হলুদ শাড়ি ও মাথায় ফুলের মালা পড়ে শিশুদের উপস্থিতি, জমির ধানকাটা কর্মসূচিকে এক অন্যরকম উৎসবে পরিণত করে তোলে।
পরে মতবিনিময় সভায় জমির কৃষক, জনপ্রতিনিধি এবং এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে মতবিনিময় সভা করেন সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. শাহাদৎ হোসেন।
এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার (১৬ অক্টোবর) দুপুরে গাইবান্ধা সদর উপজেলার গিদারী ইউনিয়নের কাউন্সিলের বাজার নামক স্থানে কৃষকদের সঙ্গে সরাসরি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রংপুর বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মো. আফতাব হোসেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. খোরশেদ আলম।
মতবিনিময় সভায় প্রায় ২০০ জন স্থানীয় কৃষক অংশ গ্রহণ করেন। সেখানে কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের নিজ নিজ বাড়িতে বস্তায় মরিচ, বেগুন ও আদা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন এবং তাদের মধ্যে প্রণোদনা হিসেবে এসব কৃষি বীজ ও বস্তা সরবরাহ করেন। এছাড়া বন্যা সহনশীল জাতের স্বল্পকালীন রোপা আমন ও তেলজাতীয় ফসল সরিষা ও সূর্যমুখীর আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করেন কর্মকর্তারা। এসময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. খোরশেদ আলম বলেন, ‘গাইবান্ধা কৃষি বিভাগ প্রতিটি ইউনিয়নে বস্তা পদ্ধতিতে আদা, মরিচসহ সবজি চাষ এবং ভোজ্যতেলের চাহিদা মেটাতে সরিষা ও সূর্যমুখীর চাষাবাদ বৃদ্ধি করতে নিয়মিত কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণের কাজ করে যাচ্ছে। এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে কৃষকদের উপকরণ সরবরাহ থেকে শুরু করে সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে আসছে কৃষি বিভাগ। আশা করছি, এ ধারা অব্যাহত থাকলে স্থানীয় ভোজ্যতেলের চাহিদার প্রায় ৪০ ভাগ পূরণ করা সম্ভব। এছাড়া স্বল্পমেয়াদী এবং বন্যা সহনশীল জাতের আমনের আবাদ বাড়ানো গেলে এক-দুই ফসলি জমিকে চার ফসলি জমিতে রূপান্তর করা সম্ভব হবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রংপুর বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মো. আফতাব হোসেন বলেন, ‘এই কর্মসূচি গাইবান্ধা ছাড়াও কুরিগ্রাম এবং লালমনিরহাটেও করা হয়েছে। তবে গাইবান্ধার কর্মসূচি অত্যন্ত ফলপ্রসূ মনে হচ্ছে। উত্তরাঞ্চলের এই জেলাগুলো নদীবেষ্টিত হওয়ার কারণে স্বল্পমেয়াদী ব্রি জাতের আমনের চাষ বৃদ্ধি আমাদের অন্যতম লক্ষ্য। এটা করতে পারলে বছরের বাড়তি সময় ধানের পাশাপাশি কৃষকরা অন্যান্য শাক- সবজির চাষ করতে পারবে। কৃষি বিভাগের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন কৃষকরা। এতে দেশ এবং কৃষক উভয়ই লাভবান হবে।’
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় এ বছর সরিষার তেল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭ হাজার ২০০ মেট্রিকটন। আর ২ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে স্বল্প মেয়াদি আমন ধান (ব্রি-৭৫,৭১) চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।