পুলিশবন্ধু, অনুসন্ধান ও কেস স্টাডি ডেক্সঃ
মহানগর রাজশাহীতে পুলিশের সামনেই এক জ্যেষ্ঠ সাংবাদিককে মাটিতে ফেলে দিয়ে পিটিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে পুলিশ তাদের রক্ষার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ পুলিশের। এর প্রতিবাদে রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) রাজপাড়া থানা ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেছেন সাংবাদিকরা।
১৮ নভেম্বর ২০২২ (শুক্রবার) বিকেল ৪টা থেকে তারা এ কর্মসূচি পালন করেন। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সাংবাদিকরা থানার সামনের রাস্তায় বসেছিলেন। তারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এস এম সিদ্দিকুর রহমানকে প্রত্যাহারের দাবি জানান।
এর আগে শুক্রবার সকালে রাজপাড়া থানা পাশেই অবস্থিত ‘হোটেল এক্স’ নামের একটি আবাসিক হোটেলে সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে হেনস্থার শিকার হন দৈনিক ইত্তেফাকের রাজশাহীর নিজস্ব প্রতিবেদক মো. আনিসুজ্জামান। বিতর্কিত এই হোটেলে দুটি কোচিং সেন্টার রাজশাহীর সরকারি প্রমথনাথ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের নিয়ে গিয়ে একটি অনুষ্ঠান করছিল। সম্প্রতি এই হোটেলে ডিজে পার্টির অশ্লীল নৃত্যের দৃশ্য সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়।
এই বিতর্কিত আবাসিক হোটেলে স্কুলের শিক্ষার্থীদের কেন নেওয়া হয়েছে সে ব্যাপারে একজন অভিভাবক সাংবাদিক আনিসুজ্জামানকে ফোন করে জানালে তিনি তা দেখতে গিয়েছিলেন। এ সময় তিনি দেখেন, হোটেলের দোতলায় ছাত্রীদের নিয়ে নাচগানের অনুষ্ঠান চলছে। সাংবাদিক আনিসুজ্জামান এ দৃশ্যের একটি ছবি তুলে বের হচ্ছিলেন। তখন হোটেলের কর্মীরা তাকে আটকে রাখেন। তারা তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে তার ফোন থেকে ছবি ডিলিট করার চেষ্টা করেন।
খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রফিকুল ইসলাম ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম মহাসচিব রাশেদ রিপনসহ কয়েকজন সাংবাদিক। তারা প্রায় এক ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকা সাংবাদিক আনিসুজ্জামানকে পুলিশের উপস্থিতিতে উদ্ধার করে হোটেল থেকে বের হচ্ছিলেন। তখন হোটেলের কর্মীরা আবারও পুলিশের সামনেই সাংবাদিক আনিসুজ্জামানকে মাটিতে ফেলে পেটান। পুলিশ তখন নির্বিকার ছিল।
এ সময় ওই এলাকার এক সন্ত্রাসীকে হোটেল কর্তৃপক্ষের পক্ষ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রকাশ্যেই হত্যার হুমকি দিতে দেখা যায়। পুলিশের সামনেই ফোন করে অন্য সন্ত্রাসীদের অস্ত্র নিয়ে ঘটনাস্থলে ডাকতেও দেখা যায় ওই সন্ত্রাসীকে।
পরে সাংবাদিকরা ‘হোটেল এক্স’-এর সামনে অবস্থান নিয়ে অভিযুক্তদের আটকের দাবি জানালে পুলিশ দুজনকে থানায় নেয়। কিন্তু থানায় নেওয়ার পর আইনি ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করা এবং উল্টো ‘হোটেল এক্স’-এর পক্ষ নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন ওসি এ এস এম সিদ্দিকুর রহমান।
আরএমপির বোয়ালিয়া জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার তৌহিদুল আরিফের সামনেই ওসি সাংবাদিক নেতাদের সঙ্গে ঔর্দ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ও গ্রেপ্তারে উদ্যত হন। এর প্রতিবাদে সাংবাদিকরা থানার সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। তারা ওসিকে প্রত্যাহারের দাবি জানান।
রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রফিকুল ইসলাম জানান, ওসি প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে।